একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা ২০২৩

প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ আপনাদের সকলকে জানাচ্ছি অনেক অনেক আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নিয়ে এসেছে আমাদের ওয়েব সাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি কবিতা সম্পর্কিত একটি পোস্ট। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি ও বাংলার মানুষের কাছে শ্রেষ্ঠ একটি দিন। এই দিনের চেতনা সকলের মাঝে জাগ্রত করার জন্য অনেকেই অনলাইনে একুশে ফেব্রুয়ারির কবিতা গুলো অনুসন্ধান করে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্যে আজকে আমরা নিয়ে এসেছি আমাদের ওয়েবসাইটে একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা সম্পর্কিত আমাদের আজকের এই নতুন পোস্টটি। আপনারা আমাদের এই পোস্ট থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতাগুলো সংগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের মাঝে ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনা জাগ্রত করতে পারবেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কয়েকটি স্মৃতি বিজড়িত দিনের পরিচয় পাওয়া যায় তার মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায় তৎকালীন ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার জন্য বাংলা সাধারণ মানুষ ও জনতা তাদের বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় আসন করতে প্রাণপণ সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছিল। বাঙালি ভাষার জন্য ইতিহাসে প্রথম জাতি যারা নিজের জীবনের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষাতে সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছিল। বাঙালির তীব্র আন্দোলনের কাছে অবশেষে পাকিস্তানের সরকারি মহল হেরে গিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষের মর্যাদা দান করে এবং সে সময় থেকে একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বাঙালি ও বাংলার প্রতিটি মানুষ পালন করে থাকে। প্রতিবছর সারাদেশেই বেশ জাকজমকভাবে ভাষা আন্দোলনের দিনটি উদযাপন করা হয়। এই দিন উপলক্ষে প্রতিটি তরু-তরনের মাঝে ভাষা আন্দোলনের চেতনা তুলে ধরা হয়।
একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা
অনেকে অনলাইনে একুশে ফেব্রুয়ারির কবিতা গুলো অনুসন্ধান করে থাকেন তাদেরকে সহায়তা করার জন্য নিয়ে এসেছি আমাদের ওয়েবসাইটে একুশে ফেব্রুয়ারির বেশ কিছু কবিতা। আপনারা আমাদের আজকের এই পোস্ট থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা গুলো সংগ্রহ করলেন একুশে ফেব্রুয়ারি চেতনা ও ইতিহাস সকলের মাঝে তুলে ধরতে পারবেন। আমাদের আজকের এই কবিতা গুলোতে ভাষা আন্দোলনের চেতনা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেগুলো আপনাদের পরিচিত তরুণ তরুণীদের মাঝে ভাষা আন্দোলনের চেতনা জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি আমাদের আজকের এই পোস্ট থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা গুলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারবেন। নিচে একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা গুলো তুলে ধরা হলো:
‘’’আল মাহমুদ’’’
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !
প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।
চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?
পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।
’’’সৈয়দ শামসুল হক’’’
একুশের কবিতা
সভ্যতার মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি
শিশুর জন্ম থেকে জরাদেহ ক্ষীণশ্বাস মানবের অবলুপ্তির সীমারেখায়
বলে গেল সেই কথা। সেই কথা বলে গেল অনর্গল–
তপ্তশ্বাস হাহুতাশ পাতাঝরা বিদীর্ণ বৈশাখীর জ্বালাকর দিগন্তে
আষাঢ়ের পুঞ্জীভূত কালো মেঘ আসবেই ঠিক।
সাগরের লোনাজলে স্নিগ্ধ মাটীর দ্বীপ
শ্যামলী স্বপ্নের গান বুকে পুষে
নবীন সূর্য্যেরে তার দৃঢ় অঙ্গীকার জানাবেই।
সংখ্যাহীন প্রতিবাদ ঢেউয়েরা আসুক, তুমি স্থির থেকো।
প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝাবাত অবহেলা করি
সঞ্চয় করে যাও মুঠো মুঠো গৈরিক মাটী:
সবুজ গন্ধবাহী সোনালী সূর্য্যের দিশা
অকস্মাৎ উদ্ভাসিত কোরে দেবে তোমার চলার পথ।
সভ্যতার মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি
শিশুর জন্ম থেকে জরাদেহ ক্ষীণশ্বাস মানবের অবলুপ্তির সীমারেখায়
বলে গেল সেই কথা। সেই কথা বলে গেল অনর্গল–
পৃথিবীর জিজীবিষু আত্মার আছে। ঘনীভূত জনতার হৃদয়ে হৃদয়ে
উজ্জ্বল শিখা সেই অমর সংবাদে ঢেউ তুলে দিয়ে গেল।
‘’’রফিক আজাদ’’’
পঞ্চানন কর্মকার
যুগ-পরম্পরাক্রমে প্রাগৈতিহাসিক উৎস থেকে
উৎসারিত হ’তে-থাকা নিরন্তর মনুষ্য-জীবন;
মুদ্রিত গ্রন্থের মূল্যে ইতিহাস: মানব-সভ্যতা
দীর্ঘকালব্যাপী অগ্রযাত্রা আর মনন-প্রবাহ।
বাঙালির দীর্ঘ ইতিহাসে সমৃদ্ধির সূত্রে এই
গ্রথিত হয়েছে গ্রন্থ; তোমাকেই ঘিরে চলে জানি
অন্বেষণ: আধুনিক বাঙালির অন্বিষ্ট মনন;
হরফ ঢালাই কাজে সার্বভৌম পাঁচটি আঙুল,
সমগ্র শতাব্দী ব্যেপে চলে দ্রুত মনন-মুদ্রণ;
প্রকাশন-শিল্প ইতিহাসে অনন্য তোমার নাম,
মুদ্রণের সৌকর্য-বর্ধনহেতু চলে বিবিধ নিরীক্ষা,
হরফ চলনশীলে প্রবর্তিত হয় আধুনিক
মুদ্রণপদ্ধতিÑ বিদেশী বান্ধব, ভাই, অকৃত্রিম
অদম্য উদ্যোগী আর ব্যগ্র পর্তুগিজ অগ্রদূত
প্রাচ্য-ভাষাবিশারদ আরো কিছু বিদেশী সুহৃদ
দিয়েছে সুদৃঢ় ভিত্তি মুদ্রাক্ষর-নির্মাণ শিল্পটি;
টাইপ-কর্তন কাজে নিয়োজিত তোমার পেশি ও
মেধা অবহেলে সাফল্যের চূড়া স্পর্শ করেছিলো!
ভাষা-সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র তোমার কামারশালা,
পঞ্চাশ বছর ধ’রে ত্রিবেণী গ্রামের কর্মকার
পরিবারে পরিচর্যা পায় বাঙালির মাতৃভাষা;
প্রকৃত প্রস্তাবে এই ‘পাইকা’ হরফে বাঙালির
নিজস্ব সভ্যতা, কৃষ্টি যথাযোগ্য সমাদর পায়।
তোমার আঙুল থেকে উৎসারিত অন্তহীন নদী
উনিশ শতকে রুগ্্ণ বাঙালির পুনর্জাগরণে
বিরাট ভূমিকা রেখেছিলো। আধুনিক বাঙালির
রক্তে আজো ঢেউ তোলে আরক্তিম পাইকা টাইপ।
তোমার ছেনির ঘায়ে তৈরি হ’লো প্রিয় বর্ণমালা।